কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গণগ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।
সোমবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এক বিবৃতিতে এই দাবি জানান।
এছাড়াও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. আসিফ মাহতাবসহ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়ারও প্রতিবাদ জানানো হয়।
দুই শিক্ষক নেতা বিবৃতিতে বলেন, কোটা সংস্কারের মতো যৌক্তিক এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমাতে গিয়ে ক্ষমতাসীন অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ মেনে নিয়ে সঙ্কটের সমাধান না করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গভীর রাতে ‘ব্লক রেইড’ দিয়ে এবং যৌথ অভিযান চালিয়ে শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই।
এরপরও যদি কেউ এসব অন্যায় এবং অসাংবিধানিক ঘটনার প্রতিবাদ না করেন সেটি হবে অন্যায়। আমরা মনে করি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গণগ্রেফতার করে সঙ্কটের কোনো সমাধান হবে না। বরং এই অন্যায় গ্রেফতার অভিযান সঙ্কটকে আরও ঘণীভূত করবে।
নেতৃদ্বয় বলেন, চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শুধু একটি পক্ষের বিবরণ (ন্যারেটিভ) প্রচার করা হচ্ছে যে দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, দেশের আসল সম্পদ হচ্ছে মানুষ। যখন ছাত্রছাত্রীদের ওপর গুলি করা হয়, ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন কোনো শিক্ষক বা সচেতন বিবেকবান মানুষ ঘরে বসে থাকতে পারেন না। অবিলম্বে এই বর্বর ও অমানবিক নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে।
তারা বলেন, আমরা দেখছি পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়াই সন্দেহবশত শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এমনকি পেশাজীবীদেরও গ্রেফতার করছে। এর স্পষ্ট উদাহরণ হলো ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. আসিফ মাহতাবকে গ্রেফতার করে বনানী থানায় দায়ের করা মিথ্যা মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়। এছাড়া কদিন আগে দেশের বরেণ্য ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বাংলাদেশের জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যিনি বয়স্ক এবং গুরুতর অসুস্থ। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার সন্ধান দিচ্ছে না।
এছাড়া ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এভাবে অসংখ্য পেশাজীবী ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে নাজেহাল ও নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা আরও বলেন, কোটা আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অযথা মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘর থেকে শিক্ষার্থীদের ধরে আনা হচ্ছে। আমরা সরকারকে বলবো- এসব গণগ্রেফতার বন্ধ করে নিজেরা পদত্যাগ করে সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে সঙ্কটের সমাধান করুন। অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিন। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় ফিরে আসতে দিন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসুন।