নিজের গাড়ি নিয়ে যারা নিয়মিত চলাফেরা করেন তারা বেশিরভাগই গাড়িতে এসি চালিয়ে রাখেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই এসি চালিয়ে রাখলে জানালা বন্ধ করে রাখেন। তবে অনেকেই আছেন জ্বালানি খরচ কমাতে এসি বন্ধ রেখে গাড়ির জানালা খুলে রাখেন। তবে এতে জ্বালানি খরচ কমলেও কিছু অসুবিধা আছে।
অনেকেই গাড়ি জানলা খুলে মাইলের পর মাইল গাড়ি চালান। এতে খরচ কমার থেকে উলটে বেড়ে যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে খরচ বাড়তে পারে এবং কী কী অসুবিধা হতে পারে-
গাড়ির জানলা খুলে দিলে বাইরের হাওয়া ভেতর প্রবেশ করে। ফলে বাতাসের চাপ বেড়ে যায় গাড়ির ভেতর। ওই চাপ সামলে গাড়ি টানতে ইঞ্জিনের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। আর ইঞ্জিনে যত বেশি প্রেসার পড়বে তত বেশি তার জ্বালানি প্রয়োজন হবে।
জানলা খুলে গাড়ি চালালে বায়ু দূষণ হবে আপনার গাড়ির ভেতরে। আসলে বাইরের ধুলো, দূষিত গ্যাস সব কিছু এসে মেশে গাড়ির ভেতরে। এর ফলে গাড়ির ভেতরে অবস্থিত বাতাসের মান কমে যায়। যাদের হাঁপানি বা অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের জন্য এটি খবই ক্ষতিকর। সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট জার্নাল দ্বারা প্রকাশিত একটি সমীক্ষায়, সারে’স গ্লোবাল সেন্টার ফর ক্লিন এয়ার রিসার্চ এর নেতৃত্বে গবেষকদের একটি বিশ্বব্যাপী দল ১০টি বিভিন্ন বৈশ্বিক শহরে যাত্রীদের জন্য বায়ু দূষণের এক্সপোজার মাত্রা তদন্ত করেছে। তারা দেখতে পেয়েছেন সকাল এবং সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে যানবাহনের ভেতরে এক্সপোজারের মাত্রা থাকে পিএম ২.৫ এবং পিএম ১০। যা চালক ও যাত্রীর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
৩. শব্দ দূষণ
গাড়ির জানলা খুলে রাখা মানে দূষিত বাতাসের সঙ্গে শব্দের হইচই। বিশেষ করে ঘিঞ্জি এলাকা দিয়ে গাড়ি চালালে এই সমস্যা তৈরি হয়। নানা লোকের নানা মন্তব্য কানে এসে ভিড় করে। এর ফলে মানসিক শান্তি নষ্ট হয় এবং গাড়ি চালানোর সময় মনোযোগও ভাঙতে পারে। যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
জানলা খুলে রাখার ফলে সূর্যের কড়া রোদ আপনার ত্বক ও চোখের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়াও বাতাসে ভেসে থাকা পোকামাকড়, মাছি ইত্যাদি ঢুকে যেতে পারে গাড়িতে। বাচ্চা থাকলে খুবই বিপজ্জনক। তাই জানলা বন্ধ রেখেই চালানো উচিত।
গাড়ির জানলা খোলা রাখলে চুরি হতে পারে ফোন, চার্জার, মানিব্যাগ, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, সানগ্লাস ইত্যাদি। কারণ তা আটকানোর জন্য কোনও প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকে না। ফলে চোরের কাছে সেগুলো চুরি করার সুযোগ তৈরি হয়।
যদি আপনি ৯৯ শতাংশ সময় গাড়ির জানালা খোলা রাখেন এতে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা হবে তা হচ্ছে গাড়ির ভেতর অতিরিক্ত ময়লা হবে। আপনাকে বারবার গাড়ির ভেতর, ফ্লোর ম্যাট, সিট পরিষ্কার করতে হবে। নাহলে কেবিনে দুর্গন্ধ হতে পারে।
৮ ঘণ্টা সময়কালে ৮৫ ডেসিবেলের এক্সপোজার স্থায়ী শ্রবণশক্তি হ্রাস করতে পারে। ভারী ট্র্যাফিক পরিস্থিতিতে যেখানে এক্সপোজার ১০০ ডেসিবেল ছাড়িয়ে যায়, সেখানে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে শ্রবণের ক্ষতি হতে পারে। জানালা খোলা রেখে গাড়ি চালালে ড্রাইভারকে ৮৯ ডেসিবেলের কাছাকাছি ধ্রুবক শব্দের স্তরে পৌঁছে দেয়। ফলে নিয়মিত আপনি জানালা খোলা রেখে গাড়ি চালালে কানের নানান সমস্যায় ভুগতে পারেন, এমনকি শ্রবণশক্তি হারাতে পারেন চিরতরে।