সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলরদের এবং উপজেলা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের-সদস্যদের অপসারণ করতে পারবে।
একই সঙ্গে এসব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক বসাতেও পারবে সরকার। এমন বিধান রেখে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান আইনগুলো সংশোধন করছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এজন্য শুক্রবার (১৬ আগস্ট) ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’; ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’; ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এবং ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বঙ্গভবনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এ সভা হয়। সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়েছে।
সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অধিক্ষেত্রে জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণ, প্ৰশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখা ও জরুরি কারণে, সময়ের প্রয়োজনে, জনস্বার্থে ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’, ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ ও ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশগুলোর খসড়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দেশের বেশিরভাগ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা এবং জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা পলাতক রয়েছেন। এতে এসব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে, ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা প্রার্থীরা। এই প্রেক্ষাপটে আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নিলো সরকার।
সিটি করপোরেশন
খসড়া ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’-এ দুইটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা ১৩(ক) ও ধারা ২৫(ক)।
১৩(ক)-তে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করতে পারবে।
বিধি দিয়ে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ সরকারি গেজেটে আদেশ দিয়ে মেয়র এবং কাউন্সিলর-এর অপসারণ কার্যকর করতে পারবে।
২৫(ক) ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে, জনস্বার্থে কোনো সিটি করপোরেশনে নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করে বা পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত এর কার্যাবলি সম্পাদনের উদ্দেশ্যে একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবে।
প্রয়োজনে যথাযথ বলে বিবেচিত হয় এমন সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকে প্রশাসকের কর্ম সম্পাদনে সহায়তা দিতে নিয়োগ করতে পারবে। নিযুক্ত প্রশাসক এবং নিযুক্ত কমিটির সদস্যরা মেয়র ও কাউন্সিলরের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে বলেও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
পৌরসভা
প্রস্তাবিত ‘স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এ দুইটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা ৩২(ক) ও ধারা ৪২(ক)।
ধারা-৩২(ক)-তে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভার মেয়র বা কাউন্সিলরকে অপসারণ করতে পারবে।
ধারা-৪২(ক) ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে অত্যাবশ্যক বিবেচনায় জনস্বার্থে সরকার কোনো পৌরসভায় একজন উপযুক্ত ব্যক্তি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে।
জেলা পরিষদ
খসড়া ‘জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এ দুইটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা ১০(ক) ও ধারা ৮২(ক)।
ধারা-১০(ক)-তে বলা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের সরকার অত্যাবশ্যক বিবেচনা করলে জনস্বার্থে অপসারণ করতে পারবে।
বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে বলে ধারা ৮২(ক) তে উল্লেখ করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ
‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এ প্রস্তাবিত ‘উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এ দুইটি নতুন ধারা সন্নিবেশ করা হয়েছে। তা হলো ধারা ১৩(ঘ) ও ধারা ১৩(ঙ)।
সংশোধন অনুযায়ী, বিশেষ পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান বা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বা অন্য সদস্যদের অপসারণ করতে পারবে সরকার। বিশেষ পরিস্থিতিতে নিয়োগ দিতে পারবে প্রশাসক।