নাকি দেশের বিচার বিভাগের সংস্কার, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার সহ প্রয়োজনীয় সকল সেক্টর এ সংস্কার⁉
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গতানুগতিক ধারার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয় এইটা সম্ভবত সবাই বুঝে।গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের নিকট জনসাধারণ প্রত্যাশা অনেক টাই বেশি।
গণঅভ্যুত্থান (জনগণের সরাসরি প্রতিরোধ বা বিদ্রোহ) একটি দেশের জন্য একটি গুরুতর পরিস্থিতি, যা সাধারণত জনগণের অসন্তোষ, দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট, অবিচার, বা শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে ঘটে। গণঅভ্যুত্থানের পর প্রতিষ্ঠিত সরকারের দায়িত্ব হবে এই সংকট থেকে শান্তিপূর্ণভাবে উত্তরণ ঘটানো এবং জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এই পরিস্থিতিতে সরকারের করণীয় হতে পারে:
১. সহিংসতার পরিহার ও সংলাপের মাধ্যমে সমাধান খোঁজাঃ
গণঅভ্যুত্থানের পর, সরকারের উচিত সহিংস প্রতিক্রিয়া থেকে বিরত থাকা এবং জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংলাপ শুরু করা। তাদের সমস্যাগুলো শোনা এবং বাস্তবসম্মত সমাধান বের করার চেষ্টা করতে হবে।
২. জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি দেওয়াঃ
গণঅভ্যুত্থানের মূল কারণ যদি দুর্নীতি, স্বৈরতান্ত্রিক শাসন, বা সরকারি ব্যর্থতা হয়, তবে সরকারকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এটি পারে:
দোষীদের বিচার নিশ্চিত করা।
স্বচ্ছ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেওয়া।
জনগণের অভিযোগের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
৩. নৈতিকতা ও ন্যায়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠাঃ
অভ্যুত্থানের পর সরকারের দায়িত্ব হবে জনগণের কাছে ন্যায়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং তা বাস্তবায়ন করা। এর মধ্যে থাকতে পারে:
বৈষম্য দূর করা।
সংবিধান বা আইনের প্রয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত করা।
৪. নতুন নীতিমালা প্রণয়নঃ
জনগণের দাবি মেনে নতুন নীতিমালা তৈরি করা এবং প্রশাসনিক কাঠামো সংস্কার করা জরুরি। এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:
গণতান্ত্রিক কাঠামোর পুনর্গঠন।
স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
৫. নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধতা অর্জনঃ
গণঅভ্যুত্থানের পর সরকারের বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তাই নতুন ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে সরকার পুনরায় বৈধতা অর্জন করতে পারে।
৬. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্গঠনঃ
অভ্যুত্থানের পেছনে যদি অর্থনৈতিক সংকট বা সামাজিক বৈষম্য থাকে, তাহলে তা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন:
বেকারত্ব দূর করার উদ্যোগ।
দারিদ্র্য হ্রাস।
জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন।
৭. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা নেওয়াঃ
গণঅভ্যুত্থানের পর পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে, এ সহযোগিতা অবশ্যই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে।
৮. গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাঃ
গণঅভ্যুত্থান প্রমাণ করে যে জনগণ তাদের কথা বলতে চায়। সরকারকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সমালোচনা গ্রহণ করার মনোভাব তৈরি করতে হবে।
গণঅভ্যুত্থান একটি সংকেত যে সরকার জনগণের সঙ্গে সংযোগ হারিয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের উচিত বিনয়, দায়িত্বশীলতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেওয়া।
এই সকল আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন না করে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের প্রতিষ্ঠায় – গনঅদ্ভুত্থানের সরকার ইতিহাসের পাতায় কি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রবে না ⁉