তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যমূলক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। ভারতের একতরফা নীতি ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার কারণে বাংলাদেশ তিস্তা নদীর পানি থেকে ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না। ভারতের এই অবিচারকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে ব্যাখ্যা করা যায়—
১. তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া:
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৮৩ সালে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি হয়েছিল, যেখানে বাংলাদেশকে তিস্তা নদীর ৩৬% পানি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এরপর ২০১১ সালে দুই দেশের মধ্যে একটি চূড়ান্ত চুক্তির খসড়া প্রস্তুত হয়, যাতে বাংলাদেশকে ৫০% পানি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার (বিশেষত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আপত্তি জানিয়ে এটি আটকে দেয়। আজ পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি, ফলে বাংলাদেশ শুষ্ক মৌসুমে ভয়াবহ পানি সংকটে পড়ে।
২. শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কমিয়ে দেওয়া:
তিস্তা নদীর প্রবাহ মূলত বর্ষাকালে বেশি থাকে, কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে (ডিসেম্বর-এপ্রিল) ভারতের বাঁধ ও ব্যারাজের কারণে পানির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। বাংলাদেশের রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায় না।
৩. ভারতের একতরফা বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণ:
ভারত তিস্তা নদীর উজানে গজলডোবা ব্যারাজসহ একাধিক বাঁধ নির্মাণ করেছে, যা থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের বিভিন্ন অঞ্চলে পানি সরিয়ে নেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশ অংশে পানি প্রবাহ কমে আসে। গজলডোবা ব্যারাজের কারণে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের অংশে তিস্তা প্রায় শুকিয়ে যায়, কিন্তু বর্ষাকালে ভারত হঠাৎ করে পানি ছেড়ে দিলে বন্যা সৃষ্টি হয়।
৪. আকস্মিক পানি ছেড়ে বাংলাদেশে বন্যা সৃষ্টি:
শুষ্ক মৌসুমে ভারত তিস্তার পানি আটকে রাখে, কিন্তু বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি হঠাৎ ছেড়ে দেয়, যার ফলে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যা হয়। এ ধরনের অপরিকল্পিত পানি নীতি কৃষি, বাসস্থান, অবকাঠামো এবং সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকায় বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৫. আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায্যতার লঙ্ঘন:
আন্তর্জাতিক নদী আইনের (UN Convention on the Law of the Non-Navigational Uses of International Watercourses, 1997) মূলনীতি অনুযায়ী, অভিন্ন নদীর পানি দুই দেশের মধ্যে ন্যায্যভাবে বণ্টিত হওয়ার কথা। কিন্তু ভারত একতরফাভাবে তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করছে, যা আন্তর্জাতিক নীতি ও চুক্তির লঙ্ঘন।
৬. কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা:
ভারত একাধিকবার তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশকে আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ২০১৭ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন যে এই চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে, কিন্তু এখনও তা হয়নি। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তির কারণে চুক্তি ঝুলে আছে।
তিস্তা নদীর পানি বণ্টনে ভারতের অবিচার বাংলাদেশকে কৃষি, পরিবেশ ও সাধারণ জনজীবনের দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ভারত যদি ন্যায্যতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তাহলে দ্রুত তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর করা প্রয়োজন। তা না হলে, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পানির সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এই অবস্হায় ভারতের সংগে বন্ধুশুলভ আচরণ না করে, আমাদের উচিত এখনই ভারতকে বয়কট করা। আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতের নেতিবাচক আচরন তুলে ধরা।
So raise your hand for- India Out.