১৮ কোটির ওপর মানুষের প্রতিদিনকার খাদ্যের যোগান দেয়ার সংগ্রামটাই অনেক বড় ব্যাপার। সরকার তার কৃষি ও উৎপাদন খাতকে গতিশীল করতে পেরেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আজকে যে ডিমের দাম ৫২টাকা প্রতি হালি, আলুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে আলু রপ্তানি করা হলো আর অন্যদিকে তা সিন্ডিকেটের হাতে ছেড়ে দেয়া হলো। কেন বাজার সিন্ডিকেটের হাতে সরকার বন্দি থাকবে? সরকারের আমলা, কামলারা কেন বারবার অসহায় আত্মসমর্পণ করেন। সহজ কথায় আসি, এই বাজার সিন্ডিকেট হলো রাজনৈতিক লুটেরা শ্রেণি। তারা দেশের সকল সেক্টরকে একইভাবে ভাগবাটোয়ারা কেন্দ্রিক সিন্ডিকেটে পরিণত করেছে। খাদ্যগুদাম কিংবা কোল্ড স্টোরেজ একটি রাজনৈতিক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে যারা ক্ষমতায় আছে তাদের নীতিনিষ্ঠ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে আগে। দেশে পেঁয়াজ, মরিচ, ডাল, তেল, লবণসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়েই এই বাজার সিন্ডিকেট সক্রিয়। একেকসময় একেক গোষ্ঠী যারা খুবই চিহ্নিত তারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে।
🩸সেক্ষেত্রে বর্তমান সরকার কী করছে সেটাই বড় প্রশ্ন!
বিগত ১৫ বছরে প্রতিটি সেক্টরে ব্যয় বেড়েছে মারাত্মক গতিতে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ যাবতীয় বিল বেড়েছে, বেড়েছে লন্ড্রি খরচ কিংবা মোবাইল বিল। এছাড়া বছর বছর চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়ও বাড়ছে। একজন উচ্চমধ্যবিত্ত মানুষের আয় দিয়েও বর্তমান সময়ে জীবন চালাতে হচ্ছে খুব সংগ্রাম করে।
আমার পাড়ার মাদারি ভাই, ছোটবেলায় দেখতাম সব কাজেরই পারদর্শী ছিল সে।
কাজ শেষ করার পর তাকে আলু ভাজি ভাত অথবা পান্তা ভাত, পেঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ দিলে তৃপ্তির সঙ্গে হাফ কেজি চালের ভাত খেয়ে ফেলত।
সিক্স প্যাক আলা মাদারি ভাই প্রতিদিন কারোর না কারোর বাসায় যে কোন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো।
মাদারি ভাইয়ের ৫-৬ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে দিব্যি সংসার চলত মহা সুখে। খাদ্য, বস্ত্র ,বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা সবই চলতো তার চাহিদা মতোই।
বর্তমানে মাদারি ভাইয়ের সেই তৃপ্তির চোখ আর কোথাও খুঁজে পাই না।
এটাই বোধ করি,
ভাতের অধিকার ⁉
🩸🩸নির্বাচন বা ভোটের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। ভারতবর্ষে প্রথম ভোটের প্রচলনের খোঁজ মেলে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০-৫০০ অব্দে। বৈদিক, জৈন ও বৌদ্ধশাস্ত্রমতে ভারতে ষোলটি রাষ্ট্র ছিল, যাদের মহাজনপদ নামে আখ্যায়িত করা হয়। এই জনপদগুলোতে হয় রাজতন্ত্রশাসিত, নয় গোষ্ঠীতন্ত্রশাসিত সরকারব্যবস্থা ছিল। এসব জনপদের কোনো কোনোটিতে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য ভোটব্যবস্থা চালু ছিল; কিন্তু সাধারণ জনগণ এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ভোট হত উচ্চবর্গীয় ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের দ্বারা। বর্জ্জিগণ পদ্ধতিগত ও আধুনিক শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেন, যা ক্ষমতাশালী লিচ্ছবি, বিদেহ ও মল্লদের সমন্বয়ে গঠিত। তাদের রাজ্যসীমা নেপালের দক্ষিণ থেকে গঙ্গার উত্তর সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাদের শাসনব্যবস্থায় সর্বাধিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। তারা চালু করেন ভোট প্রদান প্রক্রিয়া, সুসংগঠিত ফেডারেল কাউন্সিল, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবার অংশগ্রহণ ও আলোচনা, শক্তিশালী প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বিচারিক প্রশাসন ও শক্তিশালী রক্ষীবাহিনী যাদের দায়িত্ব ছিল পরাক্রমশালী প্রতিবেশী মগধ ও কোশল রাজ্যের যে কোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করা। ভারতে যে সময় গণতন্ত্রের চর্চা ও ভোট ব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয়, ঠিক সেই সময় গ্রিসের এথেন্সে গণতন্ত্র নিয়ে আলাপ-আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। যদিও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রিসে তখনো যথার্থ মনে হয়নি বলে এই পদ্ধতিটি শাসনব্যবস্থায় তারা গ্রহণ করেনি। ভারতের কিছুকাল পর গ্রিসে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনুসৃত হতে শুরু করে।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতির গোড়াপত্তনে নির্বাচন ব্যবস্থা আমূল পাল্টে যায়। বাংলাদেশের ১২টি নির্বাচনের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়।
মহা কারিশমার দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থেকে, নিজ দলের প্রার্থীদের কে স্বতন্ত্র প্রতিক দিয়ে নির্বাচনে নিজেদের জয়ী ঘোষণা করে।এর আগে দেশে ১১টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ পাঁচ বার, বিএনপি চার বার ও জাতীয় পার্টি দুই বার জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে।
আওয়ামী লীগ প্রথম, সপ্তম, নবম, দশম ও চলতি একাদশ সংসদ নির্বাচনে; বিএনপি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। জাতীয় পার্টি তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়।
সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। অপরদিকে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ,একাদশ সংসদ তার মেয়াদকাল পূরণ করে।
দ্বাদশ সংসদ এক বছর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর মধ্যে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়ে। সর্বোচ্চ ৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে এ নির্বাচনে। অন্যদিকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে। এ নির্বাচনে ২৬.৫ শতাংশ ভোট পড়ে।
গণতন্ত্রে জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। জনগণের এই ক্ষমতার উৎস হলো ভোটাধিকার। নির্বাচনের মূল চালিকাশক্তিই হলো ভোটার। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সমান ভোটাধিকার থাকে। নাগরিকের এই ভোটদানের অধিকারকে ‘মৌলিক’ অধিকার হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ জনগণের অপরাপর মৌলিক অধিকার খাদ্য-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ অন্য অধিকারগুলোর মতো ভোট দেওয়ার অধিকারও এক ধরনের নাগরিক অধিকার। বলতে হয়, নাগরিক অধিকারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম অধিকার হলো ভোট দেওয়ার অধিকার। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলোবির মতে, ‘নির্বাচকমণ্ডলী হলো প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘গণতন্ত্রে ভোটাধিকার একটি অতিমূল্যবান অধিকার এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও বটে।’
বাংলাদেশ সংবিধানের ১২২(১) অনুচ্ছেদেও উল্লেখ আছে, প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেক নাগরিক যাদের বয়স ১৮ বছর, তারা ভোটের মাধ্যমে ঠিক করবে তাদের প্রিয় দেশ কার দ্বারা পরিচালিত হবে, তারা কার দ্বারা পরিচালিত হবে, তাদের গ্রাম, নগর, শহর কার দ্বারা পরিচালিত হবে। আর এ রকম একটি অবস্থান থেকে ভোটের অধিকারটা অনেক বড় একটা বিষয়। আর ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনগণ তার প্রতিনিধি নির্বাচন করে তার পক্ষ হয়ে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কার্যবলি ন্যায়-নৈতিকতার সঙ্গে সুচারুরূপে সম্পাদন করার জন্য আইনসভায় (জাতীয় সংসদে) সদস্য হিসেবে প্রেরণ করেন। একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই নিজের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে নিজের অন্তর্ভুক্তি সুনিশ্চিতকরণে ভোট হচ্ছে উত্তম পন্থা। ‘দ্য স্পিরিট অব লজ’ বইয়ে এর লেখক ফরাসি দার্শনিক চার্লস লুই দ্য মন্টেস্কু বলেছেন, ‘?প্রজাতন্ত্র অথবা গণতন্ত্র যে কোনো ক্ষেত্রের ভোটেই, দেশের প্রশাসক হও অথবা প্রশাসনের অধীনে থাকোÑ এই দুটি অবস্থার মধ্যেই পর্যায়ক্রমে ভোটারদের থাকতে হয়। নিজেদের দেশে কোন সরকার আসবে তা বাছাই করার ‘মালিক’ অথবা ‘মাস্টার’ হিসেবে কাজ করে ভোটাররাই, ভোট দিয়ে একটি সার্বভৌম শাসনব্যবস্থাকে চালু রাখে জনসাধারণই।’ আপনার ভোট দেশের গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও উন্নয়ন বাস্তবায়নের ম্যান্ডেট। আপনার এই ভোট যে কোনো অন্যায় ও অনাচারের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান হতে পারে। আপনার একটা ভোট দেশের ভালোর দিকে পরিবর্তনের নীরব হাতিয়ার হতে পারে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, 🩸‘বুলেটের চেয়ে ব্যালট বেশি শক্তিশালী।’
আর এই ব্যালট আপনার ভাগ্য পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের ভাগ্য পরিবর্তনেও সহায়ক হবে। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা আর সুন্দর সমাজ ও উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণে নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
বর্তমান বাংলাদেশের ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সের নাগরিকরা
কতবার ,কিভাবে ভোট দিতে পেরেছেন তা দেশের সকলেই জানেন⁉
আমরা এখন থেকে আমাদের ভোট আমাদের ইচ্ছেমতো প্রার্থীকে দিতে চাই।