1. info@aynatv.info : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
  2. admin@aynatv.info : admin :
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

হাতুড়ি-ছেনি রেখে কলম হাতে ছামিয়েলের স্বপ্ন পূরণের গল্প

রুশাইদ আহমেদ, রংপুর
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা চর সংবলিত জেলা কুড়িগ্রাম। দেশের উত্তরাঞ্চলীয় এই জেলার রৌমারী উপজেলার অন্তর্গত দাঁতভাঙা ইউনিয়নের একটা ছোট্ট গ্রাম ঝগড়ার চর। মানুষের সংখ্যা হাজার তিনেক।

তাদেরই একজন ছিলেন ছামিউল। বড় এক ভাই ও বোন, ছোট ভাই আর বাবা-মাকে নিয়ে ছিল পরিবার। বাবা কাজ করতেন ইটভাটায় আর মা সামলাতেন ঘর। ২০১২ সালে দাঁতভাঙা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মানবিক শাখায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। কিন্তু পারিবারিক ও আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে মেধাবী ছোট ভাই শামীমের পড়াশোনার খরচ জোগাতে বইখাতা ছেড়ে হাতুড়ি-ছেনি হাতে তুলে নেন ছামিউল। নিজের স্বপ্ন পূরণের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন তিনি ছোট ভাইকে।

পরিবারের প্রতি দায়িত্ব থেকে নির্মাণ খাতে শ্রম ব্যয় করতে তিনি পাড়ি জমান কুমিল্লার চান্দিনায়। কিছুদিন কাজ করেন নেত্রকোনার কমলাকান্দা এলাকার একটি সোলার কোম্পানিতে। কাজের তাগিদে যান দেশের আরও নানা জায়গায়। ছয় বছর পর ২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর ছোট ভাই শামীম বিয়ে করে ঢাকায় চলে যান। ছামিউলের মতো তিনিও ছাড়েন পড়াশোনা। আবারও স্বপ্ন চূর্ণের স্বাদ পান ছামিউল।

এর মাঝে, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে তিনি হাতুড়ি-ছেনি রেখে আবারও কলম হাতে পড়ার টেবিলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলে সমর্থন দেন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু দীর্ঘ সময় পর পড়াশোনা শুরুর চেষ্টা করায় তাঁর পাড়া-প্রতিবেশী তাঁকে আখ্যা দেয় ‘পাগল’ বলে৷ বাধ্য হয়ে পাশের গ্রামে গিয়ে ছামিউল টাপুর চর বিজি হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। নিজের নামও বদলে রাখেন মো. ছামিয়েল ছামি।

পরে ২০২১ সালে স্কুলটি থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন রৌমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজে। সেখান থেকে মানবিক শাখা হতে এইচএসসি পাস করেন ২০২৩ সালে। পাড়া-প্রতিবেশী ও কিছু আত্মীয়স্বজনের কটু কথা ও ঠাট্টা-বিদ্রুপ দূরে ঠেলে প্রথম দফার স্নাতক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার চেষ্টা করলেও অর্থের অভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেননি ছামিয়েল। পরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) অধ্যয়নরত এক স্বজনের পুরোনো বই দিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ভর্তিযুদ্ধে নেমে চলতি বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় ১১৪৫তম, কুবিতে ৩১৪তম এবং সমন্বিত সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বা জিএসটিতে ২০৯৩তম স্থান অর্জন করেন ছামিয়েল।

পরে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে। হাতুড়ি-ছেনি রেখে স্বপ্ন পূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে আসা ছামিয়েল অবশ্য তাঁর এই অর্জনকে খুব বড় কিছু বলতে নারাজ। দারিদ্র্যের চোখরাঙানি সত্ত্বেও দুই বছর বয়সী এক সন্তানের পিতা ছামিউল এখন পড়াশোনা শেষ করে প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন।

গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রজনতার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে অন্য সবার মতো মাঠে নামেন ছামিয়েল। জুলাইয়ের শুরু থেকে আন্দোলনের শেষ পর্যন্ত কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার অধিকাংশ বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন তিনি।

এ দিকে, রংপুরে ছামিয়েলের পড়াশোনা ও অবস্থানের ভার বহন করতে এগিয়ে এসেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা এবং একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জহির রায়হান। ফলে কিছুটা দুশ্চিন্তামুক্ত হয়েছেন ছামিয়েল।

এ প্রসঙ্গে জহির রায়হান বলেন, ছামিয়েল ভাইদের মতো সংগ্রামী স্বপ্নবাজদের পাশে থাকা আমাদের সকলের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। ছামিয়েল ভাই যে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন, তা অনেক কঠিন। তবে আমি বা আমরা সবসময় ছামিয়েল ভাইদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রভাষক নিয়াজ মাখদুম বলেন, ছয় বছরের মতো দীর্ঘ সময় গ্যাপ দিয়ে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ পর্যায়ে আসা অত্যন্ত কঠিন কাজ। কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে লকডাউনের সময়েও আমরা দেখেছি এক-দুই বছরের মধ্যে অনেকে ঝরে পড়েছেন। সে দিক থেকে একবার পড়াশোনা থেকে দূরে গিয়ে আবার নতুন করে এত বছর সংগ্রাম করে সমসাময়িক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে ছামিয়েলের এখানে আসা—খুবই বড় একটা অর্জন।

ছামিয়েলের শিক্ষকরাও তাঁকে সহযোগিতা করবেন উল্লেখ করে নিয়াজ আরও বলেন, আমরা শিক্ষকরাও চাই, ছামিয়েল ভালোভাবে পড়াশোনা করে তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবে৷ বিভাগের শিক্ষকরাও নিজেদের জায়গা থেকে সবসময় ছামিয়েলকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Comments are closed.

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
All rights reserved © 2024