1. info@aynatv.info : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
  2. admin@aynatv.info : admin :
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন

আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী: মুক্তিযোদ্ধা বনাম দখলদার—একজন কলম সৈনিকের অভিজ্ঞতা

Reporter Name
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫

রাজনীতির মাঠে আদর্শ, ক্ষমতা আর ব্যক্তিগত সম্পর্ক কীভাবে পাল্টে যায়, তার এক তিক্ত অভিজ্ঞতা আমার ঝুলিতে আছে। যমুনার পাড়ে ভূঞাপুর থেকে ‘দৈনিক টাঙ্গাইল পত্র’ নামে একটি পত্রিকার বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সময় আমি এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম। শুধুমাত্র সংবাদ প্রকাশ আর কলাম লেখার ‘অপরাধে’ আমার বাবার বন্ধু, রাজনৈতিক সহকর্মী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী আমাকে সহ অন্যান্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।

আমি হয়তো একটু বেশিই লিখালিখি করতাম। সেই ‘দোষে’ তিনি তার দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বাদী বানিয়ে মাত্র ছয় দিনে আমার বিরুদ্ধে মোট ২২টি মামলা ঠুকে দিয়েছিলেন। টেলিফোনেও আসত নিয়মিত হুমকি-ধামকি আর অশ্রাব্য গালিগালাজ। সেই সময় যমুনার চরাঞ্চলের এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে লুকিয়ে থাকতাম। পরে মরহুম অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম কাকার আইনি লড়াইয়ের সুবাদে আমার জামিন হয়েছিল।

অনেকেই আমাকে আশ্বস্ত করেছিল যে, তুলা ভাসানীর ছেলে হিসেবে লতিফ সিদ্দিকী চাচা আমাকে আলাদাভাবে বিবেচনা করবেন। কিন্তু তৎকালীন সময়ে তিনি যেন দু’চোখ বন্ধ করে যমুনা পাড়ের জমি দখল করা শুরু করেছিলেন। সংবাদ প্রকাশের জেরে তিনি আমাকে টেলিফোনে যে হুমকি দিয়েছিলেন, সেই তিক্ত স্মৃতি আমি অনেকদিন মনে রেখেছিলাম। মজার ব্যাপার হলো, আমার সহকর্মীরা প্রায় সকলেই আপোস করে পরবর্তীতে সুখে শান্তিতে দিনাতিপাত করলেও আমি সেই মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি।

মন্ত্রিত্ব হারানোর পর লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেছিলেন বলে জেনেছিলাম। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর প্রতি আমার অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু একজন মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী অথবা একজন দখলদার লতিফ সিদ্দিকী অথবা একজন সন্ত্রাসীর গডফাদার লতিফ সিদ্দিকীর জন্য কেবলই ঘৃণা। এই ঘৃণা সকল অপরাধীর জন্য, সে যেই হোক না কেন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তার দখলদারিত্ব এবং তার ক্যাডারদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঠিক বিচার হওয়া প্রয়োজন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনীতিবিদ হিসেবে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছে ভূখণ্ডের যথেষ্ট দায় আছে। সেই দিক বিবেচনা করে তার হাতে হাতকড়া না পড়ালেও চলত। mob না করে স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়ায় তার বিচার করা যেত। তিনি হাসিনার মন্ত্রী ছিলেন, এবং যথেষ্ট অন্যায়-অনাচার করেছেন—এটা যেমন ঠিক, তেমনই শেষের দিকে হাসিনা সরকারের সমালোচনা করেছেন, সেটাও ঠিক। হাসিনাও তাকে জেল খাটিয়েছিলেন। তার অপকর্মের সঠিক বিচার হলে আজীবন জেলেই থাকতে হবে, কিন্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে বিচার বহির্ভূতভাবে অপদস্থ না করলেও চলত। তিনি দৌড়ে পালানোর লোক নন, কাজেই তার হাতে হাতকড়া না লাগালেও চলত।

( বিশেষ দ্রষ্টব্য: লতিফ সিদ্দিকী আমার বাবার বন্ধু ছিলেন এবং তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে একটা সময় পর্যন্ত স্নেহ করতেন। কিন্তু যখন থেকে তার অন্যায়-দুর্নীতি আমার সামনে এসেছে, তখন থেকেই আমি লিখেছি এবং তার বিরাগভাজন হয়েছি। হাজার চেষ্টা করেও তার সাথে আপোস করানোর ব্যবস্থা আমাকে দিয়ে কেউ করাতে পারেনি। কাজেই এখন তিনি বেকায়দায় আছেন বলে তার বিরুদ্ধে বলছি—এটা ভেবে ভুল করবেন না। তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমার কলম তখন থেকেই চলত-যখন তিনি মন্ত্রী ছিলেন )

লেখক: কবি, সাংবাদিক, আবৃত্তিকার ও বাচিক শিল্পী

Please Share This Post in Your Social Media

Comments are closed.

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
All rights reserved © 2024