বেরোবি প্রতিবেদক: জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ছাত্রলীগ নেতা আবু সালেহ্ মো. নাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।রবিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুর নগরীর খামার মোড় এলাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়েরকৃত বিস্ফোরক মামলার আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদ।জানা যায়, জুলাই আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর ফটকের (অধুনা শহীদ আবু সাঈদ ফটক) সামনে পৌঁছালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও স্থানীয় যুবলীগ-আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা লাঠি-সোঁটা ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন।এ সময়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক আবু সালেহ মো. নাহিদও লাঠি-সোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন। সিসিটিভি ফুটেজেও চাদরে মুখ ঢেকে অস্ত্র হাতে তাকে মহড়া দিতে দেখা যায়।সেই সূত্র ধরে জুলাই আন্দোলনের এক বছরেরও বেশি সময় পর ০৭ অক্টোবর রংপুর নগরীর খামার মোড় এলাকায় পরিচালিত এক বিশেষ অভিযান শেষে নাহিদকে গ্রেপ্তার করে তাজহাট থানা পুলিশ। তাকে বর্তমানে তাজহাট থানায় রাখা হয়েছে।তাজহাট থানার এসআই রাশেদ খান জানান, জুলাই আন্দোলনে সশস্ত্র হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের আওতায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলার আসামি আবু সালেহ মো. নাহিদকে রবিবার রংপুর নগরীর খামার মোড় এলাকা থেকে বিশেষ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি এখন তাজহাট থানায় রয়েছেন। সুযোগমতো তাকে আদালতে তোলা হবে।এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, জুলাই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী সকলকে আমরা চিহ্নিত করে মামলা করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন ব্যবস্থা নিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে নাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে শুনেছি। আমরা আশা করি—যেসব হামলাকারীকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি, তাদেরকেও অচিরে গ্রেপ্তার করা হবে।প্রসঙ্গত, বিগত সরকারের আমলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ত্রাসের রাজত্ব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর সিট বাণিজ্য, সময়ে সময়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দেখানোর অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি, বিরুদ্ধ মতের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গেও নাহিদ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।এ ছাড়া, চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক বরাবর মার্ক টেম্পারিং, অনিয়ম ও অসদচারণের কারণে পরিসংখ্যান বিভাগের আওয়ামীপন্থী দুই শিক্ষক অতুল চন্দ্র সিংহ এবং রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগটির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার পর তিনি বিভাগটির একটি পুরুষ শিক্ষার্থীদের মেসেঞ্জার গ্রুপে অভিযুক্তদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বার্তা দেন। পরে রশীদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।