দুর্গাপূজায় সরকারি ছুটি ৩ দিন (অষ্টমী, নবমী ও দশমী) করাসহ ৪ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাবনা শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব দাবি তুলে ধরা হয়।
গোলটেবিল আলোচনায় লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর। দুর্গাপূজার মূল ৩টি দিনই হলো অষ্টমী, নবমী ও দশমী। এই উপলক্ষে দিন-রাত পূজার কাজে ব্যস্ত থেকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সার্থকভাবে দুর্গাপূজা সম্পাদন করতে হয়। দুর্গাপূজায় হিন্দু সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার। কারণ, ৫ দিনের দুর্গাপূজায় মাত্র ২ দিন সরকারি ছুটি, যার মধ্যে আগে ছিল এক দিন। বর্তমান সরকার এসে সেটা দুইদিন করেছে। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল ৩ দিন। যার কারণে হিন্দু সম্পদায়ের অনেকেই দুর্গাপূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে পূজার আনন্দ ও ধর্মীয় যজ্ঞ শেষ করতে পারে না। এমনকি পরিবার পরিজন এর সঙ্গে পূজার আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে না।
তিনি জানান, আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করছি এবার থেকেই দূর্গাপূজায় সরকারি ছুটি ৩ দিন (অষ্টমী, নবমী ও দশমী) করা হোক।
দুর্গাপূজা সাম্প্রদায়িক শক্তির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মন্দিরে প্রতিমা বানানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। দুর্গাপূজা ও নির্বাচন এই দুটি বিষয় নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অতীত অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। কারণ, পূজার আগে ও পরে এবং যে কোনো নির্বাচনের আগে ও পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ও তাদের স্থাপনার ওপর আঘাত নিয়মিত ভাবে হচ্ছে। এরই মধ্যে ৪টি জেলায় দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। পূজার আরও ১০ দিন বাকি। এ হামলা ও ভাঙচুর আরও বাড়বে বলে আমরা মনে করছি। এরই মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সন্নিকটে। তাই এবার পূজামণ্ডপ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের স্থাপনা সাম্প্রদায়িক শক্তির লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে এই উৎসবের নিরাপত্তা নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায় এখনই ভাবতে শুরু করেছে।
পূজায় নিরাপত্তার শঙ্কা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ২০২৫ সালের শারদীয়া দুর্গাপূজা নিয়ে শঙ্কা বোধ করছি। সারা দেশব্যাপী পূজার আগে ও পরে, এমনকি পূজা চলাকালীন মন্দিরে হামলার আশঙ্কা করছি। কোন জায়গায় হামলা হতে পারে সেই সব জায়গাসহ সারাদেশে দুর্গাপূজার আগে ও পরে নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রত্যেকটি স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজা মন্দিরে ও মণ্ডপে সরকারী খরচে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাসহ প্রতিটি মন্দিরে পূজার ১০ দিন আগে থেকে পূজা চলাকালীন সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিগত তিন বছরের ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায় যে শারদীয় দুর্গাপূজা নিয়ে জাতীয় হিন্দু মহাজোটের শঙ্কা বোধ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মন্দির কিংবা ভিন্ন ধর্মাবলম্ববীদের ওপর ধর্মীয় সহিংসতা, জোরপূর্বক ধর্মান্তকরণের মতো ঘটনা যতটা না বেদনাদায়ক, তার চেয়ে বেশি বেদনাদায়ক এসব ঘটনার ক্ষেত্রে বিচারহীনতা এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা। কেন বারবার এমন হচ্ছে, কাদের স্বার্থ আছে এর পেছনে তার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি আজও।
গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী, গনফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার দেবনাথ, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জোটের সভাপতি শ্যামল কুমার রায়সহ প্রমুখ।
হিন্দু মহাজোটের দাবিসমূহ-
১. দুর্গাপূজায় সরকারি ছুটি ৩ দিন (অষ্টমী, নবমী ও দশমী) করতে হবে।
২. প্রত্যেকটি স্থায়ী ও অস্থায়ী পূজা মন্দিরে সরকারী খরচে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থাসহ প্রতিটি মন্দিরে পূজার ১০ দিন আগে থেকে পূজা চলাকালীন সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করা।
৩. গত বছরের মতো দুর্গাপূজায় সেনাবাহিনীর টহল দেওয়া।
৪. দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি মনিটারিং সেল করা।