পাঁচ তারিখের পর থেকে দেশটা যেন এক নতুন স্বৈরাচারের কবলে পড়েছে, যার নাম ‘মবতন্ত্র’। যখন যার যা খুশি, তাই করছে। দলবদ্ধ হয়ে পুরনো শত্রুতার জেরে হোক কিংবা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে, ‘স্বৈরাচারের দোসর’ তকমা লাগিয়ে মব সৃষ্টি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।
এক চরম নৈরাজ্য আর অরাজকতার ছবি এখন আমাদের চারপাশে। এ কি স্বাধীনতা, নাকি মবের হাতে ক্ষমতার লাগাম তুলে দেওয়া? আমার মনে হয়, এই পরিস্থিতি একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার ধারণা যেন আজ এই মবের হাতে জিম্মি।
আইন, বিচার, প্রশাসন—সবকিছুকেই যেন বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে কিছু উচ্ছৃঙ্খল জনতা। তারা ক্ষণিকের উন্মাদনায় এমন সব কাজ করে যাচ্ছে, যা সভ্য সমাজের পক্ষে অশোভন।
এ কোন দেশে আমরা বসবাস করছি, যেখানে বিচারালয়ের বাইরে রাস্তায়ই সবকিছুর ফয়সালা হয়ে যাচ্ছে? বিধাতার দেওয়া সবচেয়ে মূল্যবান যে জিনিস—জীবন, আজ তা কিছু উন্মত্ত মানুষের হাতে খেলনা! বিশেষ করে আমি লক্ষ্য করছি, বেশ কিছুদিন যাবৎ একটি মহল সাংবাদিকদের উপর আক্রোশ মেটানোর প্রবণতা থেকে দেশজুড়েই তৎপর হয়েছে।
সংবাদকর্মীরা হলেন সমাজের বিবেক। তাঁরা অনিয়ম, দুর্নীতি, আর অপশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেন বলেই হয়তো আজ এই কোপের মুখে। সত্য তুলে ধরার এই অপরাধে তাঁদের জীবন আজ হুমকির মুখে। যে কলম সত্য লেখে, সেই কলমকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার এই অপচেষ্টা আজকের সমাজকে কোথায় নিয়ে যাবে?
আমার মন ভারাক্রান্ত হয় যখন শুনি, রংপুরে আমাদের ছোটোভাই, এটিএন নিউজের প্রতিনিধি ও ডিআরবি নিউজের স্বত্বাধিকারী শাহরিয়ার মিম মব সৃষ্টি করে হত্যার শিকার হওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন। তাঁর অপরাধ কী? তিনি অবৈধভাবে লাইসেন্স নেওয়ার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন এবং সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছিলেন। এই কি তবে প্রতিবাদ করার পুরস্কার?
এক জন সাহসী সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ করার এই চেষ্টা আমাকে স্তম্ভিত করে দেয়। এই যেন আলোর বিপরীতে অন্ধকারের জয়, ন্যায়ের বিপরীতে অন্যায়ের আস্ফালন। মিমের মতো প্রতিবাদী সাংবাদিক সহজে পাবে না রংপুর। তাঁর সাহসী পদক্ষেপ, ন্যায় ও সত্যের প্রতি তাঁর অটুট অঙ্গীকার আমাদের জন্য এক শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। ভুলে যেও না রংপুর মিমের এই অবদানকে। ভুলে যেও না তোমার এই বিপ্লবী সন্তানকে, যে তোমার সমাজের জঞ্জাল দূর করতে ভয় পায়নি। আমাদের সকলের উচিত এই প্রতিবাদী কণ্ঠের পাশে দাঁড়ানো, যাতে মবতন্ত্রের এই ভয়াল থাবা আর কাউকে গ্রাস করতে না পারে। আমি চাই, সমাজ এই মবের স্বৈরাচারকে প্রতিহত করে সুবিচার আর শান্তির পথে হাঁটুক।-
-লেখক: কবি, সাংবাদিক, আবৃত্তিকার ও বাচিক শিল্পী